গণআন্দোলনের মুখে জেনারেল এরশাদের 9 বছরের শাসনের পতন হলেও তিনি রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়েছেন
তিনি সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতা দখলের পর জাতীয় পার্টি' নামে দল গঠন করেন তবে তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে
অন্য সব দলের বিরোধিতার বিষয়টি ছিল তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ দেশকে কয়েকটি প্রদেশে ভাগ করার সহজ
কিছু সংস্কারের পদক্ষেপ নিলেও তিনি তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি জেনারেল এরশাদের শাসনের সময়
হাজার 1988 সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী আনা হয় শেষ পর্যন্ত তাঁর সরকারের
পতনের পর তিনি জেলে গিয়েও সব দলের অংশগ্রহণে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন এবং সেই নির্বাচনে
জাতীয় পার্টি 35 টি আসন পেয়ে ভোটের রাজনীতিতে একটা প্রভাব ফেলেছিল আন্দোলনের মুখে জেনারেল এরশাদকে
যখন ক্ষমতা ছাড়তে হয় তখন তাকে বি���েশে চলে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি সেই
প্রস্তাবে রাজি হননি তিনি জেলে যাওয়ার বিষয় কি মেনে নিয়েছিলেন জেনারেল এরশাদ বিদেশি বিদেশি
না গিয়ে বিষে ছিলেন বলেই পরে রাজনীতিতে টিকে আছেন বলছেন বিশ্লেষকরা বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন
প্রায় তিন দশক ধরে দেশের ভোটের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির একটা প্রভাব
থাকলেও বিভিন্ন সময় জেনারেল এরশাদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে দলটির আস্থার সঙ্কটে পড়েছে
জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ জন্মগ্রহণ করেন রংপুরে তার নানার বাড়িতে 930 সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি
তবে তার শৈশব এবং স্কুল জীবন কেটেছে বাবা-মায়ের সাথে ভারতের কুচবিহারের দিনহাটায় সেখান থেকেই
তিনি এস��সসি পাস করেছেন স্কুল শেষ করে তিনি রংপুরের কারমাইকেল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছেন হোসেন
মোহাম্মদ এরশাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী নেয়ার পর উকিল হওয়ার চিন্তা থেকেই
ল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন কিন্তু আইন পড়া শেষ হওয়ার আগেই 1952 সালে তিনি সেনাবাহিনীতে চাকরি তাতে
যোগ দেন তার বাবা মা এবং ভাই বোন বা কাছের আত্মীয় না তাকে প্রিয় নামে ডাকতেন এটি ছিল তার ডাকনাম 4
ভাই 5বোনের মধ্যে হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ ছিলেন মেজর সবার বড় বোনের নাম ছিল পেয়ারি এবং সেই নামের
সাথে মিলিয়ে এরশাদের পরিবারে তার নাম ছিল পেয়ারা বাবা মকবুল হোসেন পেশায় আইনজীবী ছিলেন এবং
তিনি করেছিলেন কুচবিহারের দিনহাটায় মাহমুদা খাতুন গৃহিণী ছিলেন সেখানেই কুচবিহার দিনহাটা
দেই তার বেড়ে ওঠা জেনারেল এরশাদের প্রথম স্ত্রী রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির নেত্রী
এবং গত সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন নানা গুঞ্জনের পেক্ষাপটে 2000 সালে জেনারেল এরশাদ একজন
ফ্যাশন ডিজাইনার বিদিশা ইসলামকে বিয়ে করেছিলেন বিয়ের পর এই নারী বিদিশা এরশাদ নামেই পরিচিত
হন তবে সেই ঘর বেশিদিন টেকেনি এরশাদের খেলাধুলার আগ্রহ ছিল বেশি তিনি ছাত্রজীবনে ফুটবলার হিসেবে
পরিচিতি পেয়েছিলেন আর সেই সময় ফুটবল ছিল বেশ জনপ্রিয় খেলা স্কুল এবং কলেজ জীবনে এরশাদ রংপুর
অঞ্চলে বিভিন্ন ক্লাবের ফুটবল খেলতে যেতেন এছাড়া দিবি তখন থেকেই কবিতা লিখতেন এবং কারমাইকেল
কলেজের সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্বও তিনি পালন করতেন
ইফতার পর একজন গরীব কৃষক নিয়ে এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালে রাষ্ট��রনিয়ন্ত্রিত পত্রিকা দৈনিক
বাংলায় তার অনেক কবিতা ছাপা হয়েছিল তা অবশ্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নানারকম আলোচনা ছিল তিনি আত্মজীবনী
লিখেছেন সে বইয়ের নাম আমার কর্ম আমার জীবন এছাড়া তিনি কয়েকটি কবিতার বই বের করেছেন হাজার 981
সালের 30 শে মে চট্টগ্রামে এক সামরিক অভ্যুত্থানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন সে
সময় জেনারেল এরশাদ সেনা প্রধান ছিলেন জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর সেই সময়ের ভাইস-প্রেসিডেন্ট
বিচারপতি আব্দুস সাত্তার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন এবং তার নেতৃত্বেই বিএনপি'র সরকারি গঠিত
হয়েছিল কিন্তু সেই সরকার বেশিদ��ন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি বিচারপতি আব্দুস সাত্তার সরকারের
দুমাস পরে জেনারেল এরশাদ কয়েকজন জেনারেল কে নিয়ে রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করে মন্ত্রীদের ব্যাপারে
দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেছেন এবং এভাবে দেশ চলতে পারে না বলে বাতাও দিয়েছিলেন বিচার প্রতিষ্ঠার
তাকে পাত্তা দেয়ার পর জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখলের ক্ষেত্র তৈরি করেছিলেন শেষ পর্যন্ত 1982 সালের
24 মার্চ জেনারেল এরশাদ বিচারপতির সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন ক্ষমতা দখলের পর দেশের
রাজনীতি নিষিদ্ধ করে তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বারের মতো সামরিক শাসন জারি করে নিজেকে প্রধান
সামরিক শাসক হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন তিনি নতুন স্লোগান চালু করেছিলেন আর সেটি ছিল নতুন বাংলাদেশ
গড়ব মোরা তবে তার সেই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ করেছিলেন ছাত্ররা হাজার 1982 সালের
11 সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবসকে কেন্দ্র করে মজিদ খানের প্রস্তাবিত শিক্ষা নীতি বাতিলের দাবি নিয়ে
ছাত্রসংগঠনগুলোর সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা শুরু করেছিল সেই বছরের নভেম্বরে তৈরি হয়েছিল সব ছাত্র
সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ ফোরাম ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ পরের ব��র হাজার 983 সালের 14 এবং 15 ই ফেব্রুয়ারি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্ররা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে নামলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে
কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছিল জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনে সেই প্রথম রক্ত ঝরেছিল ঢাকার রাজপথে
এর পরও তার বিরুদ্ধে ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলন গড়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল জেনারেল এরশাদ
আন্দোলন দমনের চেষ্টার পাশাপাশি নিজের রাজনৈতিক হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তৎপর হলে তিনি 1986
সালের শুরুতে বিভিন্ন দল থেকে মিজানুর রহমান চৌধুরী এবং মওদুদ আহমেদসহ ���নেক রাজনীতিককে
দিয়ে জাতীয় পার্টি নামের দল গঠন করেন সেই দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে তিনি নির্বাচন দিয়ে রাষ্ট্রপতি
হন এরই মাঝে রাজনৈতিক দলগুলো তার বিরুদ্ধে যৌথভাবে আন্দোলন শুরু করেছিল জেনারেল এরশাদ তখন সেই
1986 সালে সংসদ নির্বাচন করেছিলেন এবং সেই সংসদ মাত্র এক বছর টিকে ছিল 1988 সালে তিনি মূল ধারার দলগুলোর
বয়কটের মুখে একতরফা নির্বাচন করলেও তিনি বেশিদিন টিকে থাকতে পারেননি দুই বছর পরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি
এবং বামপন্থী দলগুলোর অর্থাৎ তিনি জোটের গণআন্দোলনের মুখে 1990 সালের 6 ডিসেম্বর জেনারেল এরশাদের
শাসনের পতন হয় তার শাসনের সময় আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে অনেকেই নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে নূর
হোসেন এবং ডাক্তার মিলনের নাম এখনো মুখে মুখে উচ্চারিত হয় জেনারেল এরশাদের পতনের তিনটি স্বৈরশাসকের
পথ দিবস হিসেবে এখনো বিভিন্ন দল ও সংগঠন পালন করে থাকে তিনি মোট 9 বছর ক্ষমতায় ছিলেন জিয়াউর রহমান
যেমন 19 দফা কর্মসূচি নিয়েছিলেন তারা দলের জেনারেল এরশাদ 18 দফা উন্নয়নের কর্মসূচি নিয়ে রাজনীতিতে
নেমে ছিলেন তিনি ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ এর কথা বলেছিলেন এবং দেশকে কয়েকটি প্রদেশে ভাগ করার পরিকল্পনা
��িয়েছিলেন কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি
হাইকোর্ট বা উচ্চ আদালতে রাজধানী ঢাকার বাইরে অন্য বিভাগীয় শহরগুলোতেও স্থানান্তরের উদ্যোগ
নিয়েছিলেন বিরোধিতার মুখে সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয় তার সময় প্রথম উপজেলায় এবং জেলা পরিষদ গঠিত
হয়েছিল
তার ক্ষমতার শেষ দিকে উপজেলা নির্বাচন হয়েছিল তার এই পদক্ষেপগুলোকে বিশ্লেষকদের অনেকেই ইতিবাচক
হিসেবে বর্ণনা করেন তার সময় এই 1988 সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করে স���বিধানের অষ্টম সংশোধনী
আনা হয়েছিল তখন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি প্রধান দুই দলই এর বিরোধিতা করেছিল কিন্তু পরে কোন দল ইয়ারের
পরিবর্তন করেনি জেনারেল এরশাদের শাসনের পতনের পর তাকে জেলে নেয়া হয়েছিল তার বিরুদ্ধে হত্যা
এবং দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ডজনখানেক মামলা হয়েছিল
কথা বলার লোক নেই আমি একলা নির্জন কারাগার কথা বলার লোক নেই পড়ার বই নেই সারাদিন বে গাছের নিচে বসে
সময় কাটাতাম দুর্বিসহ যন্ত্রনা সহ্য করতে হয়েছে ছয় টি বছর
1991 সালে গণতন্ত্র আবার ফিরে আসার পর তিনি জেলে থেকেই সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন সেই পরিস্থিতিতে
তার দল জাতীয় পার্টি 35 টি আসন পেয়েছিল তিনি রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন
এরপর এর সংসদ নির্বাচন গুলোতে তিনি নিজে কখনো পরাজিত হন নিয়ে হাজার 1996 সালের নির্বাচনের পর ত���নি
জেলে থেকেই আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের জন্য সমর্থন দিয়েছিলেন তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে 6 বছর
জেল খাটার পর জেনারেল এরশাদ জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো কয়েকটি তিনি দোষী
সাব্যস্ত হয়েছেন এবং কোনোটিতে খালাস পেয়েছেন এসব মামলার কারণে তিনি স্বাধীন অবস্থান নিয়ে
রাজনীতি করতে পারেননি এরপর ভোটের রাজনীতিতে তাঁর দল জাতীয় পার্টির একটা তৈরি হয় রংপুর অঞ্চলের
17 টি আসনে জাতীয় পার্টির ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি প্রধান
দুই দল তাকে সাথে নিয়ে আর চেষ্টা করে তবে গত কয়েকটি নির্ব���চনে জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের
সাথেই
থাকতে হয়েছে জাতীয় পার্টি গত কয়েকটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে জোট থেকে অংশ নিয়েছে যদিও
দলটি তাদের দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিয়েই লড়েছে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে টিকে গেলেও জেনারেল
এরশাদ এবং তার দল নিয়ে মানুষের মাঝে আজ তার কিছুটা অভাব রয়েছে বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে
2014 সালের 5 ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের সময় জেনারেল এরশাদ তার বক্তব্য বা অবস্থান বারবার
বদল করেছিলেন ফলে তার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়ে ছিল গত দশম সংসদে তার দলের তিনজন নেতা
সরকারের মন্ত্রিসভায় ছিলেন এবং তিনি নিজে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ছিলেন একই সাথে তার স��ত্রী
রওশন এরশাদ ছিলেন সংসদে বিল সর্বশেষ 2018 সালের 30 শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী
লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক হিসেবে অংশ নিয়ে 22 টি আসন লাভ করে এরপর 89 বছর বয়সে জেনারেল এরশাদ
এই সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হন এবং জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের আসনে বসে জেনারেল এরশাদ তাঁর অনুপস্থিতিতে
ছোট ভাই জিএম কাদেরকে জাতীয় পার্টির দায়িত্ব দিয়ে গেছেন তিনি উত্তরসূরি নির্ধারণ করতে গিয়েও
কয়েকবার সিদ্ধান্ত বদল করেছেন 2019 সালের শুরুতে তিনি গুরুতর
অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সময় জিএম কাদেরকে দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান করে
দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন মাসখানেক পর চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেই জিএম কাদেরকে ও চেয়ারম্যানের
পদ থেকে সরিয়ে জেনারেল এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদকে তার পরবর্তী অবস্থানে নিয়ে আসেন অল্প কিছুদিন
পরেই মে মাসের প্রথম সপ্তাহে মধ্যরাতে জেনারে�� এরশাদ হুইলচেয়ারে করে অসুস্থ অস্থায়ী সাংবাদিকদের
ক্যামেরার সামনে হাজির হন তখন তিনি আবার জিএম কাদেরকে তার উত্তরসূরি হিসেবে ঘোষণা করেন এনিয়ে
দলটিতে জেনারেল এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ এবং ভাই জিএম কাদেরের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়ে
গেছে শারীরিক অসুস্থতার কারণে 2019 সালের 26 শে জুন তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি
করা হয় তিনি 2009 সালের চৌদ্দই জুলাই সকাল 7 টা 45 মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ
করেন 16 জুলাই তাকে রংপুরের পল্লী নিবাসে লিচু বাগানে তার বাবার কবরের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়
সমাহিত ��রা হয়
0 Comments